আহসান হাবিব : [২] নারীর সঙ্গে অযৌন প্রেমে একধরনের শান্তি আছে। এখানে কোনো রাজনীতি নেই, কোনো দায় নেই, কোনো শর্ত নেই। এখানে কেবলই ভালোবেসে যাওয়া। অযৌন প্রেম একপেশে হলেও কোনো কষ্ট হয় না। এখানে থাকে শুধু মুগ্ধ হয়ে থাকা। হয়তো দেখা গেলো তার অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে হৃদয়ে একধরনের পুলক জাগলো, কিন্তু কোনো যৌন অনুভূতি জাগলো না। হয়তো দেখা গেলো তার কবিতা পড়ে কিংবা গান শুনে এক অনির্বচনীয় আনন্দ খেলে গেলো, কোনো যৌন অনুভূতি জাগলো না। নারী-পুরুষের সম্পর্কে যৌনতা একটা অলিখিত উপাদান। এটা জৈবিক, প্রাকৃতিক। 

[৩] কিন্তু এই প্রবৃত্তি ছাপিয়ে মানুষ নির্মাণ করতে পারে নিরেট অযৌন সম্পর্ক যখন শিল্প আমাদের চিত্তকে আচ্ছন্ন করে। এটাই শিল্পের পাওয়ার, নারীকে তার জৈবিকতা ছাপিয়ে দেখার এক মানবিক ভঙ্গি তৈরি হয়। চিন্তার এই স্তরটি খুবই উঁচু মাপে বাধা বলেই আমার মনে হয়। আমার অনেক নারী বন্ধু আছে, তারা হয়তো কোনো মাধ্যমের কোনো তেমন শিল্পী বা বড় মাপের মানুষ নয়, তবু তাদের প্রতি প্রেম অনুভব করি। এই প্রেম কোনো যৌন অনুভূতি জাগায় না। একটা অপূর্ব ভালো লাগা কাজ করে। দেখা হলে আনন্দ হয়, কথা হলে আনন্দ হয়। হয়তো মানসিকভাবে নৈকট্য অনুভব করি, কিন্তু কোনো যৌনতার বোধ জাগে না। এইসব অযৌন প্রেম আমাদের সম্পর্কের এক একটি মানবিক সম্পদ। মাঝে মাঝে মনে হয় যৌন প্রেমের চেয়ে অযৌন প্রেম বেশি সুন্দর। 

[৪] বন্ধুত্ব একটি সামাজিক সম্পর্ক। যা সামাজিক তাই রাজনৈতিক। আর রাজনৈতিক মানেই স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বন্ধুত্ব আগে এবং পরে, সবসময় একটি স্বার্থের সম্পর্ক। [২] করিম আপনার বন্ধু কিন্তু রহিম নয়, কেন? কারণ করিমের সঙ্গে আপনার স্বার্থের বিনিময় হয়, করিমের সঙ্গে হয় না। বন্ধুত্ব পারস্পরিক অদেখা, অলিখিত একটি স্বার্থের সম্পর্ক। [৩] অনেকেই বলেন যে মানুষ কোন কারণ ছাড়াই, কোন প্রত্যাশা ছাড়াই আপনার পাশে এসে দাঁড়ায়, সেই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধু। এটা একটা ইউটোপিয়া। যদি তাই হতো তাহলে বন্ধুত্ব ভাঙে কেন? যাদের বন্ধুত্ব টিকে, বুঝতে হবে তাদের মধ্যে একটা লেনদেন আছে। 

এই লেনদেন কখনো মূর্ত, কখনো বিমূর্ত। [৪] ব্যক্তি যখন দুর্বল হয়, তখন বন্ধুত্বকে মহিমান্বিত করে। কেউ যখন সাহায্যপ্রাপ্ত হয় না, তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বাক্স খুলে বসে। যে কোন সম্পর্কের ভিত্তি যদি অসাম্য হয়, দ্বন্দ্ব এসে হাজির হয় এবং এর মিমাংসা হয় ক্ষমতার সাপেক্ষে। বন্ধুত্ব একটি স্মার্ট সম্পর্ক। যখনি কেউ আশা করে ফেলে, তখনই সমস্যা হাজির হয়। বন্ধুত্ব টিকে থাকার শ্রেষ্ঠ শর্ত হচ্ছে ফল্গুধারার মত বয়ে চলা স্বার্থের সূচারু সাম্যাবস্থা বজায় রেখে সময় যাপন। [৫] অভিযোগ, রাগ, অভিমান- যে কোন সম্পর্কে দুর্বলতার স্মারক। ব্যক্তি নিজে বলবান না হলে এইসব ছিঁচকাঁদুনী চলবে। লেখক: ঔপন্যাসিক